বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বার্মার বিদ্রো*হীদের সাথে সম্পর্ক করতে ইচ্ছুক !! কিন্তু কেন ?

 বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বার্মার বিদ্রো*হীদের সাথে সম্পর্ক করতে ইচ্ছুক !! কিন্তু কেন ?


গত ১৪ আগস্ট, ২০২৪ তারিখে দৈনিক প্রথম আলোতে “হাসিনা–পরবর্তী বাংলাদেশে কেমন পররাষ্ট্রনীতি হওয়া উচিত” শিরোনামে একটি লেখা প্রকাশিত হয়। উক্ত লেখায় বলা হয়, “বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা তৌহিদ হোসেন সম্প্রতি আরাকান আর্মির সঙ্গে বৃহত্তর পরিসরে সম্পৃক্ততার পক্ষে কথা বলেছেন। এটি বাংলাদেশের মিয়ানমার–সংক্রান্ত নীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত।” (তথ্যসূত্র: ১)


অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে থাকা তৌহিদ হোসেন ২ মাসে আগে গত ২২ জুন, ২০২৪ তারিখে দৈনিক প্রথম আলোতে একটি আর্টিকেল লিখেন, যার শিরোনাম, “যে কারণে আরাকান আর্মির সঙ্গে সম্পর্ক গড়া প্রয়োজন বাংলাদেশের।” (তথ্যসূত্র: ২,)





লেখাগুলো পাঠ করে যা বুঝা যায়, অন্তর্ববর্তী সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা বার্মার বিদ্রো*হী দল আরাকান আর্মির সাথে সম্পর্ক তৈরী করতে আগ্রহী। তৌহিদ হোসেন উপদেষ্টা হওয়ার আগেই বিষয়টি নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে এবং নতুন সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার বিষয়টি বেশ প্রকাশ্য হয়ে যায়।


এখানে জানার বিষয় হচ্ছে, আরাকান আর্মি আসলে কে ?

আরাকান আর্মি হচ্ছে বার্মার একটি বি*দ্রোহী দল। যারা মগ বা বৌদ্ধ বি*দ্রোহী হিসেবে পরিচিত। এই বি*দ্রোহী দলটি হঠাৎ করে একটি রাষ্ট্রীয় সামরিক বাহিনীর সাথে যু*দ্ধ করে জয়লাভ করছে, বিষয়টি কী এত সোজা ? কে তাদের অর্থায়ন করছে, কে তাদের সমর্থন বা সহায়তা দিচ্ছে, এটা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক।

মূলতঃ মায়ানমারে বিদ্রোহ উস্কে দেয়ার পেছনে কাজ করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাদের অর্থায়ন এই বিদ্রোহী বাহিনীকে যু*দ্ধা*স্ত্র কিনতে সহায়তা করছে এবং মায়ানমারে বি*দ্রোহ উস্কে দিচ্ছে। (তথ্যসূত্র: ৩)

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন বার্মার বিদ্রো*হী দলকে সমর্থন দিচ্ছে, তার স্বার্থ কি?
এর উত্তর হচ্ছে- বঙ্গপোসাগর ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে চীনের বদলে আমেরিকা নিজ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চায়। স্থিতিশীলতা নয়, বরং অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরী করে চীনের অর্থনীতি এগিয়ে যাওয়াকে আটকাতে চায়। এ জন্য এ অঞ্চলে চীন সমর্থিত সরকারগুলোর বিরুদ্ধে শক্তিগুলোকে তারা ব্যবহার করে। আরাকান আর্মি সহ বিভিন্ন বিদ্রো*হীগ্রুপগুলোকে নানান উপায়ে সহায়তা করে তারা সেই কাজটি করে যাচ্ছে।

প্রশ্ন আসতে পারে, বাংলাদেশের নতুন সরকার কেন আরাকান আর্মির মত একটি বিদ্রো*হী দলের পক্ষে কথা বলছে ?


এর সহজ উত্তর হচ্ছে-
প্রধান উপদেষ্টা ইউনুস নিজে পাক্কা আমেরিকাপন্থী লোক। তার পছন্দ করা উপদেষ্টারাও আমেরিকাপন্থী হবে স্বাভাবিক। সেভাবেই পছন্দ করা হয়েছে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনকে। যেহেতু বার্মার বিদ্রো*হীগ্রুপগুলো আমেরিকার মদদেই সেখানে কার্য চালাচ্ছে, তাই তোহিদ হোসেন ক্ষমতা পাওয়ার সাথে সাথে তার বন্ধুর বন্ধুর সাথে বন্ধুত্ব করার আগ্রহ প্রকাশ করলো।

এখানে কেউ বলতে পারে,
নতুন সরকারের তো উদ্দেশ্য ভালো। তারা বার্মার বিদ্রো*হীদের সাথে সু-সম্পর্ক করে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে চায়।


এর উত্তরে বলতে হয়,
ভাই গাছে কাঠাল গোফে তেল। আরাকারে রোহিঙ্গা গ*ণহ*ত্যা শুরুই করেছিলো এই বৌদ্ধ মগ বা আরাকান আর্মিরা। পরবর্তীকালে সেই দাঙ্গায় দেশটির সেনাবাহিনী যোগ হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ রোহিঙ্গা আরাকান আর্মিকে জাত শত্রু মনে করে, এমনকি দেশটির রাষ্ট্রীয় বাহিনীর থেকে বেশি শ*ত্রু মনে করে। কিছুদিন আগেও মায়ানমারে রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে গ*ণহ*ত্যা চালিয়েছে এই আরাকান আর্মিরা। (তথ্যসূত্র:৪)

ঠিক আছে, বাংলাদেশ সরকার যদি মনে করে আরাকান আর্মি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে, তবে এখনই কেন ? আগে আরাকান আর্মি বার্মার সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতা দখল করুক। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাক। অতঃপর যখন রোহিঙ্গাদের জাতীয় নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে নিয়ে যাবে, তখন বিষয়টি বিবেচেনা করা যাবে। এর কিছুই হয়নি, তার আগেই একটি বিদ্রোহী গ্রুপের সাথে নতুন সরকার সম্পর্ক তৈরী করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে, বিষয়টি সত্যিই আশ্চর্যজনক। আর একটি বিদ্রোহী গ্রুপের সাথে বৃহৎ পরিসরে সম্পর্ক স্থাপন বাংলাদেশের জন্য ভালো না মন্দ, সেটা না পরে আলোচনা করবো।

No comments

Powered by Blogger.