ইউনুস সরকার কি বাংলাদেশকে ‘প্রক্সি ওয়ার জোন’ বানাতে চায়?
ইউনুস সরকার কি বাংলাদেশকে ‘প্রক্সি ওয়ার জোন’ বানাতে চায়?
‘প্রক্সি ওয়ার জোন’ বলতে বুঝায়, দুই সম্রাজ্যবাদী যু*দ্ধ করে, কিন্তু যু*দ্ধ ক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেয় তৃতীয় কোন দেশকে। যেমন- আমেরিকা আর রাশিয়ার দ্বন্দ্ব, তারা প্রক্সিওয়ার জোন হিসেবে বেছে নিয়েছে ইউক্রেনকে। আমেরিকা আর রাশিয়ার ক্ষমতা প্রদর্শনে ধ্বংস হয়েছে ইউক্রেন। একইভাবে আমেরিকা বা চীনের প্রক্সি ওয়ার জোন হচ্ছে মায়ানমার। বঙ্গপোসাগরের নিকটে কে ক্ষমতা বিস্তার করবে এই দ্বন্দ্বে গৃহ*যু*দ্ধে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হচ্ছে মায়ানমার। এখানে লক্ষণীয়, ইউক্রেন বা মায়ানমার ধ্বংসস্তুপে পরিণত হলো কি, হলো না, কিংবা সে সব রাষ্ট্রে কত গ*ণহ*ত্যা চললো, এটা কিন্তু সম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলোর দেখার কোন বিষয় না। তাদের কর্তৃত্ব ফলানো ঠিক মত হলো কী না, সেটাই তাদের জন্য বড় বিষয়।
এতগুলো কথা বলছি, কারণ বর্তমানে বাংলাদেশে নতুন ইউনুস সরকার এসেছে। তারা কি বিদেশ নীতি করছে এটা সবার জন্য জানা গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে নতুন সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন মায়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির সাথে বৃহৎ পরিসরে সম্পর্ক তৈরীর কথা বলেছে। (তথ্যসূত্র: ১)
উল্লেখ্য, মায়ানমারের বি*দ্রোহী দলগুলো মার্কিন মদদপুষ্ট এবং বর্তমান বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারও মার্কিন লবিতেই এসেছে, এটা মোটামুটি সবার জানা। স্বাভাবিকভাবেই এক বন্ধুর দুই বন্ধু নিজেদের মধ্যে সম্পর্ক তৈরী করতেই পারে। কিন্তু কথা হচ্ছে, মায়ানমারের বি*দ্রোহী*দের সাথে সু-সম্পর্ক বাংলাদেশের জন্য কতটুকু লাভজনক হবে?
প্রথমেই বলবো, বাংলাদেশের মানুষ এখন অন্ধ অবস্থায় আছে। জালেম হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। সেই হাসিনা সরকারের লোকজনকে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় পদ থেকে উৎখাত করা হচ্ছে। এতেই পরিতৃপ্ত হচ্ছে সাধারণ জনগণ। এক সরকারকে আরেক সরকারকে দমন করবে, এটা পৃথিবীর চিরাচরিত নিয়ম। কিন্তু পুরাতন জালেম দমনের আড়ালে নতুনরা দেশ ও জনগণের জন্য ক্ষতিকর কিছু করছে কী না, তার খেয়াল কিন্তু জনগণের নেই।
বাংলাদেশে এখন আমেরিকাপন্থী ইউনুসের সরকার। সে যত সুন্দর কথাই বলুক, আমেরিকার দালাল কিন্তু ঘুরে ফিরে আমেরিকার স্বার্থ আদায়েই কাজ করবে। যেহেতু, মায়ানমারের আরাকান বি*দ্রো*হীদের নানান উপায়ে সাহায্য করা লাগবে এবং বঙ্গপোসাগরে প্রভাব বিস্তার করতে অবশ্যই তাদের বাংলাদেশের সাহায্য লাগবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাথে সু-সম্পর্ক থাকলে কাজটা অনেক সহজ হবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, মায়ানমারের মত আমেরিকা-চীনের দ্বন্দ্বে বাংলাদেশ ঢুকে পড়লে আমরাও তো বিপদে পড়তে পারি। তাদের গৃ*হযু*দ্ধ ঢুকে পড়তে পারে বাংলাদেশেও।
একটি উদাহরণ দিলে বুঝতে সহজ হবে। আরাকান আর্মি বলে যে দলটির কথা বলা হচ্ছে, তারা আসলে মগ বলে পরিচিত। তারা যে স্বাধীন রাষ্ট্রের কল্পনা করে তার সীমানা কিন্তু বাংলাদেশের ভেতরে ফেণী নদী পর্যন্ত বিস্তৃত। তাদের দাবী, ফেনী নদী পর্যন্ত এক সময় তাদের ভূমি ‘মগের মুল্লুক’ ছিলো। সুতরাং তাদের স্বাধীনতা কার্যক্রম বাংলাদেশের ভেতরেও চললেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। (তথ্যসূত্র: ২)
আবার, আরাকান আর্মির সাথে বৃহৎ পরিসরে সু-সম্পর্ক হলে, তাদের আনা-গোনা ও পার্বত্য এলাকায় অ*স্ত্রের প্রভাব বাড়বে। এমনিতেই বাংলাদেশের ৩ পার্বত্য এলাকার স্বায়ত্ত-শাসন দাবী করছে উপজাতিগোষ্ঠীগুলো। এর মধ্যে আরাকান আর্মির সাথে সু-সমপর্ক বিষয়টিকে আরো বৃহৎ করে তুলবে। ইতিমধ্যে আপনারা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, কয়েকদিন আগে, বাংলাদেশের উপজাতিগোষ্ঠীগুলো ঢাকার শহীদ মিনারে কালচারাল শো ডাউন করেছে (তথ্যসূত্র: ৩) এবং খাগড়াছড়িতে বিশাল স্ফুলিঙ্গ মিছিল করেছে। (তথ্যসূত্র: ৪)
অর্থাৎ পার্বত্য উপজাতি গোষ্ঠীগুলো ফের পাহাড়কে অশান্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে বার্মার বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সাথে সম্পর্ক তৈরী, বিষয়টি বাড়াতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে।
বাংলাদেশের কিছু মানুষকে দেখেছি, বাংলাদেশে মার্কিনপন্থী ইউনুস সরকার আসায় খুশি হয়েছে। তারা ভাবছে, ইউনুস মনে হয় বাংলাদেশকে আমেরিকা বানিয়ে দিবে। আসলে আমেরিকানপন্থী সরকার আসলে বাংলাদেশ উন্নত হয়ে যাবে, এ চিন্তাটা আমার কাছে আকাশ কুসুম মনে হয়। কারণ কথায় বলে, আমেরিকা যার বন্ধু হয়, তার নাকি শত্রুর দরকার হয় না। আপনাকে আগে বুঝতে হবে, আমেরিকা কী চায় ? আমেরিকা চায় তার সম্রাজ্যবাদের বিস্তার। আর সম্রাজ্যবাদের বিস্তারের জন্য প্রয়োজন স্থিতিশীলতা নয়, বরং অস্থিতিশীল পরিবেশ। পানি ঘোলা করা, অতঃপর সেখানে মাছ শিকার করা। অর্থাৎ আমেরিকা কোন দেশে সুযোগ পেলে বরং সেখানে অস্থিতিশীলতা আরো বিস্তার করবে, এরপর সেখানে তার সম্রাজ্যবাদের বিস্তার ঘটাবে। ঐ দেশকে স্থিতিশীল করে উন্নত করে দিবে, এমন চিন্তা যারা করে তারা নিশ্চিত বোকার রাজ্যে বসবাস করে।
তাই বাংলাদেশের মানুষকে বলবো, জালেম হাসিনা ও তার লোকজনের বিচার হোক, সেটা আপনাদের দাবী থাকুক। কিন্তু সবটুকু সময় সেই চিন্তায় মজে যাবেন না। ইউনুস সরকার দেশ-বিদেশে কী পলিসি নিচ্ছে সেদিকেও খেয়াল রাখুন। এক জালেমের থেকে নিস্তার পেয়ে দেশ যেন আরেক জালেমের ক্ষপ্পরে না পরে, সেই চিন্তা থাকা সবার জন্য জরুরী।
No comments